বাজরিগর পাখি
বাজরিগর একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পাখি এবং এটি বিশ্বের অনেক অঞ্চলে মূলত পোষা প্রাণী হিসেবেই পালন করা হয়। বিভিন্ন অঞ্চলে এই পাখিটিকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমন—শেল প্যারাকিট, কমন প্যারাকিট, বা সহজভাবে বাজি।
বাজরিগর আসলে একটি ছোট আকারের, লম্বা-লেজবিশিষ্ট, দানাশস্যভোজী সুন্দর টিয়া প্রজাতির পাখি, যার মূল আবাসস্থল অস্ট্রেলিয়া। প্রাকৃতিকভাবে এই পাখির রং সবুজ এবং হলুদ, এবং ঘাড়, পিঠ ও ডানায় কালো রঙের আঁকাবাঁকা দাগ থাকে।
বর্তমানে বাজরিগরকে পোষা অবস্থায় বিভিন্ন রঙে প্রজনন করানো হচ্ছে—যেমন সাদা, নীল, ধূসর এমনকি ছোট ঝুঁটি সহ বিভিন্ন রঙে। পূর্ণবয়স্ক বাজরিগরের ক্ষেত্রে পুরুষ ও স্ত্রী পাখিকে তাদের সেরের রঙ (চোখের উপরের ঠোঁটের অংশ) এবং আচরণের মাধ্যমে আলাদা করা যায়, তবে ছানাদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস
বাজরিগর একটি মনোটাইপিক প্রজাতি, অর্থাৎ এটি Melopsittacus গণের একমাত্র সদস্য, এবং এই গণটি আবার Melopsittacini গোষ্ঠীর একমাত্র গণ। এই পাখিটি লরি এবং ফিগ টিয়াদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
উৎপত্তি
‘বাজরিগর’ নামটির সঠিক উৎস পরিষ্কার নয়। এই নামটি প্রথম ১৮০৫ সালে রেকর্ড করা হয়েছিল। বর্তমানে বাজরিগর সারা বিশ্বে পোষা পাখি হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। ছোট আকৃতি, কম খরচ, এবং মানুষের কথা অনুকরণ করার ক্ষমতার কারণে এটি পাখিপ্রেমীদের মধ্যে অত্যন্ত পছন্দের।
বাজরিগর সম্ভবত কুকুর এবং বিড়ালের পরেই বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় পোষা প্রাণী। তারা একটি যাযাবর ঝাঁকজাতীয় প্যারাকিট, যাদের ১৯ শতক থেকে পোষা অবস্থায় প্রজনন করানো হচ্ছে। তবে তারা বন্য এবং পোষা উভয় পরিবেশেই জোড়ায় জোড়ায় এবং সুযোগ পেলে প্রজনন করে।
বাজরিগর প্রাকৃতিকভাবে অস্ট্রেলিয়ার শুষ্ক অঞ্চলে দেখা যায়। সেখানে তারা পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি বছর ধরে কঠিন পরিবেশে টিকে আছে। তাদের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে যাযাবর জীবনধারা এবং চলতে চলতে প্রজননের ক্ষমতা।
বিকল্প নামসমূহ
বাজরিগর পাখির অনেক বিকল্প নাম রয়েছে—যেমন শেল প্যারট, শেল প্যারাকিট, ওয়ার্বলিং গ্রাস প্যারাকিট, ক্যানারি প্যারট, জেব্রা প্যারট, ফাইট বার্ড, এবং স্ক্যালপ প্যারট। তবে এই পাখিগুলোকে প্রায়শই "লাভবার্ড" বলা হয়, কারণ এরা কাছাকাছি বসে থাকে, একে অপরকে পরিস্কার করে এবং দীর্ঘস্থায়ী জোড়া বাঁধে।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য
বন্য বাজরিগরের দেহের রং সাধারণত হালকা সবুজ হয়, এবং পিঠে ও ডানায় থাকে কালো, হলুদ আঁকাবাঁকা দাগ। পূর্ণবয়স্কদের মুখ ও কপাল হলুদ হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক বাজরিগরের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৭ ইঞ্চি এবং ওজন ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম।
ছোট পাখির রং কিছুটা ভিন্ন। এদের কপাল পর্যন্ত কালো দাগ থাকে যা ৩-৪ মাস বয়স পর্যন্ত থাকে। এদের গালে হালকা নীল-বেগুনি দাগ এবং গলার দুই পাশে তিনটি করে কালো দাগ থাকে। সবচেয়ে বাইরের দুটি দাগ গালের নিচে অবস্থান করে।
বাজরিগরের লেজ গাঢ় নীল এবং বাইরের পালকে হলুদ দাগ থাকে। ডানার পালক সবুজ-কালো এবং সেগুলোতে হলুদ রেখা থাকে যা শুধুমাত্র উড়ার সময় বা ডানা মেলার সময় দেখা যায়। এদের ঠোঁট জলপাই-ধূসর এবং পা ধূসর-নীল রঙের, এবং পায়ের আঙ্গুল জোড়ায় বিভক্ত (zygodactyl)।
বন্য বাজরিগর পোষা বাজরিগরের তুলনায় তুলনামূলকভাবে ছোট। পোষা অবস্থায় বাজরিগরের বিভিন্ন রঙে প্রজনন করানো হয়েছে—যেমন নীল, সাদা, হলুদ-নীল, বেগুনি, প্যাড, ধূসর ইত্যাদি। অধিকাংশ বাজরিগরের পালক অতিবেগুনি আলোতে আলোকিত হয়, যা সম্ভবত প্রজনন ও সঙ্গী নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত।
পুরুষ ও স্ত্রী বাজরিগরের সেরের রঙে পার্থক্য থাকে। পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের সের সাধারণত হালকা থেকে গাঢ় নীল, আর স্ত্রীদের সের হয় হালকা বাদামী বা সাদা থেকে বাদামী। অপ্রাপ্তবয়স্কদের সের গোলাপি হয়ে থাকে—তবে পুরুষদেরটা কিছুটা বেগুনি-গোলাপি হয়।
কিছু স্ত্রী বাজরিগরের সের কেবল প্রজনন ঋতুতেই বাদামী হয়ে যায় এবং পরে আবার আগের রঙে ফিরে আসে। তরুণী পাখিদের নাকের চারপাশে হালকা সাদা ছোপ দেখা যায়, যা তাদের আলাদা করতে সাহায্য করে।
রঙের বিভিন্নতা
বন্য বাজরিগর সাধারণত সবুজ-হলুদ রঙের হয় কালো আঁকাবাঁকা দাগ সহ। তবে পোষা বাজরিগরের মধ্যে এখন অনেক রঙের বৈচিত্র্য দেখা যায়। সবচেয়ে প্রচলিত রঙের মধ্যে রয়েছে সাদা, নীল, ধূসর এবং ছোট ঝুঁটি সহ বাজরিগর। আপনার নিকটবর্তী পোষা প্রাণী বিক্রির দোকানে এই বিভিন্ন রঙের বাজরিগর সহজেই পাওয়া যায়।

Post a Comment